পত্রিকার প্রতিবেদন:
https://epaper.dailyjanakantha.com/home/print_version/47485
টিভি প্রতিবেদন :
https://www.youtube.com/watch?v=CGSGPH8LKMM এবং
https://www.youtube.com/watch?v=-F6y8OPekx8
--
** জুলাই অভ্যূথানে শহীদ মাহফুজুর রহমানের আত্নত্যাগ ও স্মৃতিকথা **
জুলাই মাস দ্বিতীয় বাংলাদেশ পুনঃনির্মানের মাস হিসেবে বিবেচিতো বর্তমানে। জুলাইয়ের বিপ্লব শুরু হয় মূলত সরকারি চাকুরি বিসিএস (BCS) পরীক্ষায় কোটার যৌক্তিক সংস্কারকে কেন্দ্র করে সরকারী চাকুরিতে মুক্তিযোদ্ধা, জেলা,নারী , ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধী, পাঁচ ক্যাটাগরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল । ২০২৪ সালের ২১ শে জুলাই বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়া সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুন-র্বহালের রায় বাতিল করে । এর পরিবর্তে আপিল বিভাগ নির্দেশ দেয় যে, সরকারী চাকরিতে ৯৩% নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে এবং ৭ % কোটা বহাল থাকবে।
অধিকার আদায় করার জন্য , দিনটি ছিল ১৯ শে জুলাই , শুক্রবার সারাদেশে জারি করা কারফিউ। আলহাজ্ব আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেনির ছাত্র মোঃ মাহফুজুর রহমান ,পিতাঃ মোঃ আব্দুল মান্নান , মাতাঃ বেগম ,জম্ম তারিখঃ ০৩/০৫/২০১০ ইং বর্তমান ঠিকানাঃ ১১/সি, এভি-৫, মদিনানগর ,লাইন-০২,বাসা-৭ ,মিরপুর ,পল্লবী,ঢাকা-১২১৬। মাহফুজুর রহমান বাবা -মায়ের ৪ সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে মাহফুজ সকলের ছোট ।মাহফুজ ২০২২ সালে আলহাজ্ব আব্বাস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনিতে ভর্তি হয়। ২০২৪ সালের কোটা আন্দোলন জোরালোভাবে । তখন মাহফুজ ও ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে যেত । তবে বাসায় বাবা -মা বুঝত না । একদিন দেরি করে বাসায় আসায় পিতা আব্দুল মান্নান জিঙ্গেস করলেন ? মাহফুজ তুমি সারাদিন কোথায় ছিলে? উত্তরে মাহফুজ বললো ,বাবা রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবু সাঈদকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে। আমি এ অন্যায়ের বিরুদ্বে আন্দোলন করছি। ১৯ শে জুলাই , শুক্রবার , জুম্মার নামাজের একঘন্টা পূর্বে বাসা থেকে গোসল করে পাঞ্জাবি পরে মাকে বলে গেলেন , আমি নামাজ পড়তে যাচ্ছি। আমার আসতে দেরি হবে বলে লিফটে উঠে মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলেন । দীর্ঘক্ষন সময় পার হয়ে গেলেও মাহফুজ আর বাসায় ফেরেনি।ওর মা দুপুরের খাবার টেবিলে সাজিয়ে রেখে ছিলেন। নিকটতম এক আত্নীয় সন্ধ্যায় ৬ টার দিকে মোবাইল ফোনে সংবাদ দিল , মিরপুর ১০ গোলচত্বরে ( বর্তমান স্বধীনতা চত্বর ) ছাত্রদের ওপর গোলাগুলি হয়েছে। অনেক ছাত্র গুলিবিদ্ব হয়েছে। মাহফুজের মাথায় গুলি লাগে মিরপুর ১০ নম্বরে গোলচত্বরের পূর্ব পাশে রাড্ডা ওআদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মেইন গেটের রোডে। এর মধ্যে এই সংবাদ বাসায় পৌছালে বাসায় বাবা-মা চিৎকার ও আর্তনাদে তাদের বাসা ভারী হয়ে যায়। আত্নীয়-স্বজন মাহফুজকে খুঁজতে বের হলে আশে পাশের হাসপাতালগুলোতেও খুঁজতে শুরু করলো । এক পর্যায়ে ঢাকা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারে কয়েকজন ছাত্রের লাশ হাসপাতালের ফ্রিজে রয়েছে। তার মধ্যে মাহফুজের বাবা ছেলের লাশ শনাক্ত করতে পেরেছে। পরের দিন ২০ শে জুলাই লাশ নিয়ে আসে এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমসহ কতিপয় ব্যক্তি জানাযা দিতে বাধা দেয়। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ নিয়ে তার গ্রামের বাড়ী (স্থায়ী ঠিকানা) গ্রাম: হরতকিতলা , পোঃ বারইখালী, থানাঃ মোরেলগঞ্জ, জেলাঃবাগের হাট। এই ঠিকানায় পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়। এদিকে মাহফুজকে হারিয়ে পিতা-মাতা পাগলের মতো আর্তনাথ করছিল। কোটা বিরোধী বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনের এক পর্যায় গন আন্দোলনে রুপ লাভ করে।এবং দেশ পুনরায় স্বধীনতা লাভ করে মহফুজসহ আন্দোলনে সকল শহীদদের আত্নার মাগফেরাত কামনা করছি। শহীদরা চিরকাল বাঙালি জাতির মনে স্মরনীয় হয়ে থাকবে।